দখিনের খবর ডেক্স ॥ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি উন্নয়ন কাজে বিকল্প (ফাঁপা) ইট ব্যবহার হচ্ছে না। ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এখনও মাটি পোড়া (সনাতনী) ইটেই চলছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যারা বাস্তবায়ন করবে তাদেরই এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে না ফলে এখনও বিকল্প ইট ব্যবহার শুরুই হয়নি। জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারের যেকোনো নির্মাণকাজে বিকল্প ইট হিসেবে পরিবেশ বান্ধব ফাঁপা ইট ব্যবহার করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, গৃহনির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এইচবিআরআই) উদ্ভাবিত বিকল্প এই ইট পরিবেশ বান্ধব ও অর্থসাশ্রয়ী। তাই এ বিকল্প ইট সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন। জানা গেছে, সহজ প্রযুক্তি ও স্বল্প শ্রমে এটা তৈরি করা যায়। এই ইট শব্দ ও তাপ নিরোধক, পরিবেশবান্ধব, ভূমিকম্প সহনীয় ও ব্যয় সাশ্রয়ী। এটি পরিবেশবান্ধবও। এই ইট তুলনামুলক কম ওজনের হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম। একটি ব্যয়সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও দুর্যোগ সহনীয় নির্মাণ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সরকারি সব নির্মাণ প্রকল্পে বিকল্প নির্মাণ প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৬ মাস আগে থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন বলা হয়, সরকারি উন্নয়ন কাজে কার্যকর হলে বেসরকারি নির্মাতারাও এসব উপকরণ ব্যবহারে এগিয়ে আসবে। এ লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি উন্নয়ন কাজে বালু বা পাথরের গুঁড়া ও সিমেন্টমিশ্রিণ করে বিকল্পভাবে তৈরি হয় এই ফাঁপা ইট ব্যবহারের নিদের্শনা দেয়া হয়। যার স্থায়িত্ব সনাতনী ইটের চেয়ে অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারী ভূমি সংস্কার বোর্ড দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর পত্র দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়। পরের মাসে ১৯ মার্চ ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখা হতে গণপূর্ত/এলজিইডি/শিক্ষা প্রকৌশল/জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইটভাটা মালিক মালিক সমিতিকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এরপর গত ২ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি সংস্কার বোর্ডসহ ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো এ উদ্যোগ নানা দফতরের চিঠি ও ফাইল চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ফরিদপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, আমাদের কাছে বিকল্প এই ইট (ফাঁপা ইট) ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে। তবে এটি কার্যকর করতে হলে সেটি সিডিউলে থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের সিডিউলে এখনো বিকল্প ইট ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তাই এই ইট ব্যবহার শুরু হয়নি। সিডিউলে উল্লেখ না থাকলেতো ঠিকাদার বিল পাবেন না। তাই তারা ব্যবহারও করবেন না। এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আশা করছি শিঘ্রই সিডিউলে বিকল্প ইট ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকবে। আর দু’এক সপ্তাহের মধ্যে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গির আলম এ বিষয়ে বলেন, এটি যারা বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করে তাদের জন্য, আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ফরিদপুর ইট ভাঁটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব এই ইট তৈরিতে খরচ বেশি হলেও মাটি ও জ¦ালানী সাশ্রয় হয়। তবে এই ইট তৈরিতে প্রথম দফায় একটু বেশি বিনিয়োগ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি ব্যবহার করা বাধ্যতামুলক। ফরিদপুরে এখন বিভিন্ন ভাটায় এই বিকল্প ইট তৈরি শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্মাণ কাজে এই ইটের ব্যবহার যতো বাড়বে ততোই এর উৎপাদনও বাড়বে।
Leave a Reply